ভ্রমন

চলুন ঘুরে আসি কুয়াকাটা

একই জায়গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য পৃথিবীর কটি জায়গায় আছে! সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়া আর জেলেদের জালে তাজা মাছের লম্ফঝম্পের দৃশ্য আর কোথায় দেখা যায়! পাশেই সোনারচরের হরিণ পালের হাতছানি আর রূপারচরের রূপ সৌন্দর্য। শুঁটকিপল্লীর কর্মব্যস্ততা। আকাশের রঙে নীল হয় লাল হয় সাগরের পানি। সৈকতসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রাখাইন পল্লী। রাখাইনদের তৈরি তাঁতের কাপড় এবং শামুক-ঝিনুকের বাহারি অলঙ্কার ও শোপিস। পাশেই রয়েছে বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধমূর্তি। প্রতি কার্তিকের পূর্ণিমায় রাস উৎসব। আরো কত কী! 
দর্শণার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই সৈকতে আছে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল ও ঘোড়া। ভাড়া সাধারণত দূরত্ব ও সময় অনুযায়ী হয়। কুয়াকাটার আশে পাশের বেশ কয়েকটি চর আছে। সেগুলি দেখতে আপনি যেতে পারেন স্পিডবোট ও ট্রলার কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকায় করে। কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। সেগুলিতে রান্না করার সকল ব্যবস্থা আছে। চুলা, খড়ি, হাড়ি, পাতিল থেকে বাবুর্চি পর্যন্ত। মুদ্র উপকূলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য রয়েছে- সমুদ্র ভ্রমণকারী জাহাজ ও ট্রলার এবং স্পিড বোট। এসব জাহাজ ও ট্রলারে উঠে পর্যটকরা সুন্দরবনের অংশ বিশেষ ফাতরার চর, সোনার চর, কটকা, হাঁসার চর, গঙ্গামতির লেক ও সুন্দরবনসহ গভীর সমুদ্রে বিচরণ করে অফুরস্ত আত্মতৃপ্তিতে নিজেদের ভরে তোলে।
কুয়াকাটায় থাকার ব্যবস্থাঃ
ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে এ পর্যটন নগরীতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল। এর মধ্যে আধুনিক মান সম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে-হোটেল মোহনা , হোটেল নীলঞ্জনা, হোটেল বি-ভিউ, হোটেল গোল্ডেন প্যারেজ, হোটেল বীচ-ভেলী, হোটেল ফ্যামিলী হোমস, কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজ, হোটেল সাগর কন্যা, হোটেল আল হেরা, হোটেল আকন, হোটেল সি-গার্ডেন, হোটেল স্মৃতি সহ আরো একাধিক হোটেল ও মোটেল। 
হোটেল মোহনা  এ কম খরচে   খাবার এর সুব্যবস্থা রয়েছে । 
কুয়াকাটা গেলে যা দেখে আসতে কখনই ভুলবেন নাঃ 
কুয়াকাটাতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে । সৈকতের কাছেই রয়েছে একটা বুদ্ধ মন্দির যা কিনা আপনার মন কেড়ে নেবে। এই বুদ্ধ মন্দিরের পাশেই রয়েছে কুয়াকাটার সেই বিখ্যাত কুয়াটি। পাশেই আছে রাখাইন মার্কেট । কেনা কাটা যা করার এখান থেকেই করতে পারেন । এখানে রয়েছ অসম্ভব সুন্দর সব তাতের কাজ । আর বার্মিজ আঁচারের পশরা । সৈকত থেকে ৬ কিমি দূরে মিছরি পাড়াতে রয়েছে ৩ তলা সমপরিমাণ উচ্চতার আরেক বুদ্ধ মূর্তি । সৈকতের ঝাউ বন থেকে কিছু দূরেই রয়েছে কুয়াকাটা ইকো পার্ক । খুব ই নয়নাভিরাম পার্ক । এছাড়া কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে সাগরের মাঝখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন কিছু সময়ের জন্য সাথে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত দেখে আসতে পারবেন সুন্দরবনের কিছু অংশ । 
সূর্য উদয় হল সাগর পাড়ের আরেক সৌন্দর্য । যারা কুয়াকাটা আসেন তারা কেউ ই এই জিনিশ টা মিস করেন না । সূর্য উদয় দেখতে হলে আপনাকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং যেতে হবে সৈকত থেকে কিছুটা দূরে কাউয়ার চর নামক জায়গায় । যেতে পারেন মোটর সাইকেলে করে । সূর্য উদয় দেখার দৃশ্য যে একবার দেখেছে সে কখনো ভুলতে পারবে না । এছাড়া কাউয়ার চরে দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি । কুয়াকাটা তে রয়েছে জেলে পল্লী । সৈকতের পশ্চিম দিকে । চাইলে দেখে আসতে পারেন । আর সমুদ্রের পানি যদি গায়ে লাগাতে চান , তাহলে বিনা দ্বিধায় নেমে পড়তে পারেন সাগরের পানিতে । এখানে কক্সবাজারের মত চোরা বালি টাইপ কিছু নেই । আর কোনো চোরা খাদ ও নেই । সৈকতে যারা বাইক চালাতে চান তাদের জন্য ও আছে সুখবর । কিলোমিটার হিসেবে বাইক ভাড়া পাওয়া যায় । প্রতি কিলো ১০ টাকা । সব শেষে প্রিয়জনের সাথে এক মনে দেখে নেবেন সূর্য অস্তের সেই হৃদয় ছুয়ে দেওয়া দৃশ্য । কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নির্জনতা । ঢেউ এর গর্জন , তীরে আছড়ে পরা আপনাকে অন্ন জগতে নিয়ে যাবে । সাগরের সাথে একাত্ম হয়ার এমন সুযোগ কখনো হারাবেন না । 

No comments :

Post a Comment