অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন যা আমরা
ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং হিসেবে জানি। ফ্রিলেন্সিং আর আউটসোর্সিং দুইটা আলাদা বিষয় ।বেশিরভাগ লোকেরাই এই দুইটাকে একই জিনিস হিসেবে বিবেচনা করি।অনলাইন থেকে আসলেই টাকা ইনকাম করা সম্ভব এবং সেটা অনেকভাবে হতে পারে। আমি
এই পোষ্টে সে বিষয় নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।
১. ফ্রিলেন্স রাইটার
আপনার যদি ইংলিশ জ্ঞান ভালো থাকে তাহলে আপনে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার করে অনলাইন থেকে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। অনলাইনে মূলত ব্লগ পোষ্ট, প্রোডাক্ট/সার্ভিস রিভিউ পোষ্ট,নিউজলেটার , ই-বুক, থিসিস, প্রেস রিলেস, কপিরাইটিং এই ধরনের কাজ পাওয়া যায়। এই জন্য আপনাকে যেকোন একটা বিষয়ে খুব ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেই বিষয়ে খুটি-নাটি সব কিছু জানতে হবে।আপনি চাইলে আপনার ব্লগ এ ই-বুক, থিসিস পেপার রাখতে পারেন। সাধারণত একজন ফ্রিলেন্স রাইটার প্রতিদিন ৩-৬ ঘন্টা কাজ করে প্রতি মাসে ৫০০-২০০০ ডলার বা তারো বেশি আয় করে থাকেন।
২. গ্রাফিক ডিজাইন
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক ডিজান করে ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করে থাকেন।। গ্রাফিক ডিজাইনের মধ্য রয়েছে লোগো ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ভেক্টর ডিজাইন, ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন, বিসনেস কার্ড ডিজাইন, পেড/মেমো ডিজাইন এর কাজ সব-সময় পাওয়া যায়। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভালো করে গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে হবে।তারপর মার্কেটপ্লেসে গিয়ে কাজের জন্য আবেদন করুন।
৩. ডেভেলোপার/প্রোগ্রামার
অনলাইন মার্কেটে ওয়েব ডিজাইনার, ডেভেলোপার, সফটয়্যার ডিজাইনার, ডেভেলোপারদের খুব চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি চান আপনি পার্ট-টাইম অনলাইনেও এই কাজ গুলো করতে পারেন। এই ধরনের কাজের জন্য অনেক বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। আর যদি নতুন হিসেবে শুরু করতে চান তাহলে আগে ভালোভাবে কাজ শিখে নিতে হবে অন্যথায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া এত সহজ হবে না।আপনার যত বেশি কাজ সফলতার সাথে শেষ করবেন তত বেশি টাকার কাজ পাওয়ার জাবে।এই জন্য দরকার ভালো ভাবে কাজটি বোঝা এবং সময়ের মধ্যে শেষ করা ।
৪. ইন্টারনেট মার্কেটিং
এস.ই.ও, এস.এম.এম, এস.ই.এম. ইত্যাদি ইন্টারনেট মার্কেটিং এর মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে এস.এম.এম. মানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর টুক-টাক কাজ শিখেও আপনি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফিক্সড প্রাইস এর জব বা আওয়ারলি জব পেতে পারেন। তাছাড়া এস.ই.ও. এর অনেক জব পাওয়া যায় একদম ব্যাসিক লেভেল এর।
৫. ইমেইল মার্কেটিং
বর্তমানে আমাদের দেশে এটিও একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্রফেশন। ইমেল মার্কেটিং এ আপনি আওয়ারলি বা ফিক্সড প্রাইস এর জব পাবেন। তবে হ্যাঁ, আপনাকে এই কাজ করার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে শিখে নিতে হবে অথবা কোন স্বনামধন্য ট্রেনিংসেন্টার থেকে ট্রেনিং নিতে হবে। ইমেইল মার্কেটিং এর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ইমেল টেমপ্লেট ডিজাইন করা, নিউজলেটার লেখা/সাজানো, ইমেইল পাঠানো ইত্যাদি।
৬. ব্লগিং
ব্লগিং মূলত নতুনদের জন্য তেমন কার্যকরী নয় কারন এটি একটি লং টাইম প্রসেস এবং ব্লগিং থেকে উপার্জন করতে হলে আপনাকে অনেক কিছু জানতে হবে অথবা টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ব্লগিং এর মাধ্যমে মূলত ইঙ্কামসোর্স হলো গুগল এডসেন্স, বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস আর সিপিসি সাইট। এছাড়া আপনি স্পনসর পোষ্ট, পেইড রিভিউ, এড স্পেস বিক্রি, পেইড গেষ্ট পোষ্টিং এর মাধ্যমে আপনার ব্লগ থেকে উপার্জন করতে পারেন।
৭. আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
আমাদের দেশে বর্তমানে আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনলাইনে আয় করার জন্য একটি পরিচিত শব্দ এবং রিসেন্টিলি অনেকেই আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও আসলে অনেকটা ব্লগিং এর মত, মানে এইখানে আপনে সফল হতে হলে আপনাকে অনেকগুলো বিষয় যেমন কন্টেন্ট রাইটিং, এস.ই.ও. ব্লগ ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি জানতে হবে। অন্যথায় আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে এবং অন্যের উপরে ভরসা করে থাকতে হবে।
৮. সব কিছু বেচে দিন
আপনার পুরাতন অব্যবহ্রত জিনিসপত্র আপনি অনলাইন মার্কেটে বেচে দিতে পারেন। এতে করে সাময়িক আপনি কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন। এছাড়া অনেকের হয়তবা ছবি আঁকা বা হ্যান্ডিক্রাফট বানানোর2 শখ থাকতে পারে, সুতরাং আপনি চাইলে সেইগুলাও অনলাইনে বিক্রয় করতে পারেন।
৯. ইউটিউব থেকে উপার্জন
আজকাল আমাদের দেশে অনেকেই ইউটিউব থেকে প্রতিমাসে খুব ভালো পরিমান টাকা উপার্জন করছে। এইটা আসলে নতুনদের জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করার। আপনাকে শুধু অল্পকিছু বিষয়ে ধারণা নিতে হবে ও পড়াশুনা করতে হবে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য। আপনি যেকোন বিষয়ের উপরে টিউটোরিয়াল টাইপ ভিডিও তৈরী করতে পারেন এবং সেইগুলা ইউটিউবে শেয়ার করতে পারেন। তারপর গুগলে এডসেন্স এর জন্য আবেদন করুন আর এডসেন্স দিয়ে আপনার ইউটিব চ্যানেল কে মনিটাইজ করুন আর টাকা উপার্জন করুন।
১০. ডোমেইন কেনা-বেচা
ডোমেইন কেনা-বেচাও অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করার সহজ একটি রাস্তা। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু পরিমান টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এইখানে আপনাকে কিছু ডোমেইন কিনে রাখতে হবে এবং সেগুলা ডোমেইন-কেনা-বেচার সাইটে হোস্ট করে রাখতে হবে। তারপর আপনি ঐ ডোমেইন গুলা বেশি দামে বিক্রয় করে আর পাশাপাশি বিজ্ঞাপন শো করে টাকা আয় করতে পারবেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত পাবেন
রুবেল ভাইয়ের এই পোষ্টে।
কোথায় কাজ করবেন? (কোন মার্কেটপ্লেসে)
অনলাইনে কাজ করার জন্য অনেক জনপ্রিয় আর বিশ্বস্ত অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে। জনপ্রিয় কয়েকটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ইল্যান্স, পিপল পার আওয়ার, গুরু, এস.ই.ও. ক্লার্ক, সোর্স ওয়েভ, টপটাল, ক্রেইগলিষ্ট, ৯৯ডিজাইন্স, ফিভার, গেটএকোডার, এনাভেটো স্টুডিও ইত্যাদি।
তবে আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই কাজ করতে চান না কেনো তার জন্য আপনাকে আগে ঐ মার্কেটপ্লেসে সুন্দর করে একটি প্রোফাই তৈরী করতে হবে। প্রোফাইলে আপনার সব তথ্য, প্রফেশনাল ছবি, আপনার কাজের পোর্টফোলিও ইত্যাদি দিতে হবে। তাহলেই আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে প্রথমে কাজ পেতে একটু সময় বেশি লাগতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই হয় কারণ আপনার প্রোফাইল নতুন এবং ঐ মার্কেটপ্লেসে আপনার কাজের কোন রেকর্ড বা রেটিং নাই। তাই হতাশ না হয়ে ঠিক মত প্রোফাইল সাজান আর আপনি যে কাজ করতে পারবেন শুধু সেই কাজেই বিড করুন।
বিড করার আগে অবশ্যই কাজের বিবরণ ভালো করে দেখে নিবেন কারন এমন কোন কাজে বিড করবেন না যেটা আপনি করতে পারবেন না। অন্যথায় দেখা গেলো যে আপনি কাজটা পেলেন কিন্তু ঠিকভাবে না করার কারনে বায়ার আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ দিবে। এতে করে ভবিষ্যতে আপনার কাজ পেতে অসুবিধে হবে।
পেমেন্ট পাবেন কিভাবে?
এইটা একটা কমন প্রশ্ন যা ৯৯.৯৯% নতুনরা করে থাকে এমনকি এমন লোকেরাও এই প্রশ্ন করে যারা এখনো কোন কাজ যানে না বা কোন মার্কেটপ্লেসে তাদের প্রোফাইলও নাই। শুধু ঠিক করেছে যে অনলাইনে কাজ করবে, কি কাজ করবে, কোথায় করবে কোন কিছুই ঠিক নাই কিন্তু আগেই জিজ্ঞেস করে বসে ভাই টাকা পাবো কিভাবে?
যাই হোক, বেশিরভাগ অনলাইন মার্কেটপ্লেসেরই (যেমন আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ইল্যান্স, পিপল পার আওয়ার, গুরু ইত্যাদি) ব্যংক ট্রান্সপার সিস্টেম রয়েছে। অর্থাৎ আপনি যে টাকা আয় করবেন সেটা বাংলাদেশের যেকোন ব্যংক একাউন্ট এ সরাসরি পাঠাতে পারবেন। তার মানে বাংলাদেশের যেকোন একটা ব্যাংকে আপনার একাউন্ট থাকলেই আপনি আপনার পারিশ্রমিক সেই একাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস এবং ব্যাংকভেদে ৩-৭ দিন সময় লাগতে পারে।
ইদানিং বাংলাদেশে আরেকটা জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে
পেওনিয়ার। অনেক মার্কেটপ্লেস এখন পেওনিয়ার একসেপ্ট করে, সুতরাং আপনি সহজেই পেওনিয়ার কার্ডের মাধ্যমে আপনার ডলার বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবেন এবং সেই ডলার বাংলাদেশের যেকোন মাষ্টারকার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ থেকে তুলতে পারবেন অথবা সরাসরি আপনার বাংলাদেশী ব্যাংক একাউন্টেও ট্রান্সপার করতে পারবেন।
পেওনিয়ার কার্ড আপনি ফ্রিতেই পেতে পারেন এবং সাথে ২৫ ডলার ব্যালেন্স ফ্রি (কিভাবে পেওনিয়ার মাষ্টার কার্ড ও ২৫ ডলার ফ্রি পাবেন সেটা এইখানে দেখুন)। এছাড়া এই পেওনিয়ার কার্ডের আরো কিছু সুবিধা আছে যেমন আপনি চাইলেই যেকোন অনলাইন মার্কেট থেকে এই কার্ড ব্যবহার করে কেনা-কাটা করতে পারবেন।
এছাড়া পেপাল হচ্ছে আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম যার মাধ্যমে আপনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে পেমেন্ট পেতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে পেপাল অনুমোদিত নয় তাই যেইসব মার্কেটপ্লেস শুধু মাত্র পেপালেই পেমেন্ট করে সেই সব মার্কেটপ্লেস এড়িয়ে চলাই ভালো। আরো কিছু জনপ্রিয় পেমেন্টের মাধ্যম হচ্ছে স্ক্রিল, পেয়জা, নেটলার ইত্যাদি।
শেষ কথা
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এই কথার বলার অর্থ হলো সব কাজ সবার জন্য নয়। যদি তাই হতো তাহলে মানুষ এত কষ্ট করে চাকুরি বা অন্য কোন কাজ করতো না, ঘরে বসে অনলাইনে টাকা কামাতো আর বিন্দাস জীবন যাপন করতো। সুতরাং অনলাইন যদি কাজ করতে চান তার আগে খুঁটিনাটি সব বিষয় (ভালো-খারাপ) জেনে নিন। এমন কাজ বেছে নিন যেটা আসলেই আপনাকে দিয়ে সম্ভব। অন্যথায় অনলাইনের পিছনে ছুটে সময় আর টাকা নষ্ট না করে অন্যদিকে চেষ্টা করুন।
আর হ্যাঁ, নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না যে লেখাটি কেমন হয়েছে।